লেনোভো আইডিয়াপ্যাড ৩২০ : এসএসডি থাকলে আরও ভালো হতো
ল্যাপটপ কেনার জন্য আদর্শ বাজেট ধরা হয়ে থাকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
এর নিচে কিনতে হলে বেশ কিছু দিক ছাড় দিতে হয়। আর বাজেট বাড়াতে পারলে ডিভাইসও ভালো পাওয়া যাবে তা নতুন করে বলার কিছু নেই।
এই বাজেটের মধ্যেও ল্যাপটপের কোনও শেষ নেই। নামিদামি ব্র্যান্ড থেকে সব ডিভাইস প্রস্তুতকারকের এমন দামের মধ্যে মডেল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে লেনোভো আইডিয়াপ্যাড ৩২০ অন্যতম।
চলুন দেখে নেওয়া যাক এ ডিভাইসের খুঁটিনাটি।
এক নজরে লেনোভো আইডিয়া প্যাড ৩২০
- ১৫ দশমিক ৬ ইঞ্চি, আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে- যার রেজ্যুলেশন ১৯২০ x ১০৮০পি ফুল এইচডি
- ইন্টেল কোর আই৫, ৩ দশমিক ৪ গিগাহার্জ কোয়াডকোর ৮ম প্রজন্মের প্রসেসর, মডেল ৮২৫০ইউ
- ৮ গিগাবাইট ২৬০০ মেগাহার্জ গতির ডিডিরআর৪ র্যাম
- এনভিডিয়া এমএক্স১৫০, ২ গিগবাইট জিডিডিআর৫ ভির্যাম সমৃদ্ধ জিপিউ
- ২ টেরাবাইট হার্ড ড্রাইভ
- ডিভিডি ড্রাইভ
- দুটি ইউএসবি ৩ পোর্ট, একটি ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট
- এইচডিএমআই পোর্ট
- ল্যান পোর্ট, কম্বো অডিও জ্যাক
- ওয়াই ফাই, ব্লুটুথ, কার্ড রিডার, ওয়েবক্যাম, ফিংগারপ্রিন্ট রিডার
- ২ সেল ব্যাটারি
- ২ দশমিক ২ কেজি ওজন
ডিজাইন
পাতলা গড়নের ল্যাপটপটির পুরোটাই তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টিকে। এর মধ্যে বাইরের প্যানেলগুলোতে দেয়া হয়েছে কালো প্লাস্টিক। ডিসপ্লে বেজেল ও কিবোর্ড ফ্রেম ধূসর রঙের।
তৈরির মান সাধারন হলেও চাপের মুখে নড়াচড়া করবে না। কিন্তু অযত্নে অক্ষত থাকবে এমন নয়। ল্যাপটপটির প্রতিটি পোর্ট রয়েছে বাম পাশে। ডানের পুরোটাই রাখা হয়েছে খালি। ডিভিডি ড্রাইভ ও লক লাগানোর জায়গা ছাড়া কিছুই দেওয়া হয়নি।
কিবোর্ডের স্টাইল লেনোভোর নিজস্ব। চিকলেট বা আইল্যান্ড কিবোর্ডের সঙ্গে এর মিল আছে। টাচপ্যাডটি হালের বড়সড় ডিজাইনের নয়, বরং কাজ চালানোর মত ছোট প্যাড।
সব মিলিয়ে, ডিজাইনে লেনোভো আইডিয়াপ্যাড ৩২০ পুরষ্কার পাওয়ার মতো না হলেও, বড় ধরণের খুঁত নেই।
ডিসপ্লে
ম্যাট আইপিএস প্যানেলের ডিসপ্লেটি দৈনন্দিন কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে, গেইমিং বা এডিটিংয়ে খুব বেশি সুবিধা হবে না। ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট দুটোই সাধারণ মানের। এর চেয়ে ভালো কিছু পেতে হলে উচ্চ মূল্যের ল্যাপটপ কিনতে হবে।
রেজ্যুলেশন দেওয়া হয়েছে ফুল এইচডি, যা আজ খুব উচ্চমানেরও নয়। আবার কমও বলা যাবে না। স্ক্রিনে একসঙ্গে দুটি অ্যাপ চালিয়ে সহজেই কাজ করা যাবে। কালার অ্যাকুরেসি খুব বেশি না হওয়ায় প্রফেশনাল ফটো ও ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য এটি বেছে না নেওয়াই ভালো।
পারফরমেন্স
সর্বশেষ ৮ম প্রজন্ম থেকে ইন্টেল সকল কোর আই৫ প্রসেসরে দিচ্ছে চারটি করে কোর। এতে পারফরমেন্স বেড়েছে বহুগুণ।
ল্যাপটপটির গিকবেঞ্চ স্কোর অনুযায়ী, অনায়াসে ফুল এইচডি ভিডিও এডিট বা ফটো এডিটের মতো কাজ করা যাবে।
র্যামেও কার্পণ্য করেনি লেনোভো। ৮ গিগাবাইট র্যাম আজও দৈনন্দিন মাঝারি কাজের জন্য যথেষ্ট। তবে ১৬ গিগাবাইট র্যাম লাগিয়ে নেয়াটাই শ্রেয়। মাল্টিটাস্কিং বা ভারি অ্যাপ চালালে বা ব্রাউজারে ২০টি ট্যাব একসঙ্গে খুললে ল্যাগ করতে পারে।
ল্যাপটপটির মূল সমস্যা, এসএসডি না থাকা। স্টোরেজ স্বল্পতা না থাকলেও এ সময় মূল ড্রাইভ হিসেবে হার্ড ডিস্ক ব্যবহার করা বিশাল সমস্যা। তাই ল্যাপটপটির অন্যান্য স্পেসিফিকেশন ভালো হলেও হার্ড ডিস্কের কারণে বুট, অ্যাপ ইন্সটল ও লোডিং টাইম বেশি লাগবে।
সব মিলিয়ে, পারফরমেন্সে ল্যাপটপটি খুবই ভালো হতে পারে- যদি হার্ড ডিস্ক বাদ দিয়ে এসএসডি ব্যবহার করা হয়।
গেইমিং
এনভিডিয়া এমএক্স১৫০ ডেস্কটপের জিটি১০৩০ এর সমকক্ষ, অর্থাৎ নতুন পুরাতন সব গেইম এটি চালাতে পারবে। লো বা মিডিয়ামের বেশি ডিটেইল নতুন গেইমে আশা করা যাবে না। এনভিডিয়া অবশ্য জিপিউটিকে গেইমিং বলে দাবিও করেনি।
যারা ই-স্পোর্টস, যেমন সিএসগো বা ডটা খেলেন তাদের জন্য জিপিউটি আজও যথেষ্ট। নতুন জনপ্রিয় গেইম যেমন ফারক্রাই ৫, অ্যাসাসিন্স ক্রিড অরিজিনস বা প্লেয়ার আননোনস ব্যাটলগ্রাউন্ডস লো সেটিংসেও ৪০ এফপিএস এর বেশি পাওয়া যাবে না। এ মান ৩০ এর আশপাশে ঘোরাফেরা করবে।
দৈনন্দিন কাজ
ওজন ও সাইজে ল্যাপটপটি আল্ট্রাবুকের মধ্যে পড়ে না। ফলে সঙ্গে করে সহজেই নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর চিন্তা বাদ দিতে হবে। যারা চলার পথে বেশ ভারি কাজ, যেমন ফটো ও ভিডিও এডিটিং, কোড কম্পাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যান তৈরি বা ডেটা অ্যানালাইসিস করে থাকেন তাদের জন্য ল্যাপটপটি কাজে আসবে।
লেনোভো কিবোর্ডে টাইপ করার অভিজ্ঞতা বরাবরই ভালো, দীর্ঘ সময় টাইপ করার জন্য বেশ কাজের। ব্যাকলাইটের অনুপস্থিতি বা টাচপ্যাড উচ্চমানের না হওয়ায় অবশ্য এটিকে সেরার কাতারে ফেলা যাবে না।
তবে অফিসের কাজের জন্য নির্ভরযোগ্য মেশিন হতে হলে সবার আগে প্রয়োজন ব্যাটারি লাইফ। সেদিকেও পিছিয়ে আছে এটি। আসলে বলা যেতে পারে, এটি শুধু টেবিলে বসে চার্জার লাগিয়ে ব্যবহার করার মতো মেশিন, পথে-ঘাটে নয়।
ব্যাটারি লাইফ
মাত্র ২ সেল ব্যাটারি ও ডেডিকেটেড জিপিউ মিলিয়ে ডিভাইসটির ব্যাটারিলাইফ গিয়েছে কমে। চাপ পড়লে সর্বোচ্চ দেড় ঘন্টা ও হালকা কাজে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা ব্যাটারি লাইফ পাওয়া যাবে। চার্জার সঙ্গে রাখাই শ্রেয়।
থার্মাল ডিজাইন
ডিভাইসটিতে দেওয়া হয়েছে সর্বশেষ প্রযুক্তির প্রসেসর ও জিপিউ। ফলে তাপ নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে। বড়সড় ল্যাপটপটিতে আছে বড় হিটসিঙ্ক ও পাইপ। যে কারণে টানা ব্যবহারে অসম্ভব গরম হবে না। এরপরও বিছানায় বা কাপড়ের ওপর রেখে ব্যবহার করা অনুচিত।
পরিশেষ
মূল্য অনুযায়ী, আইডিয়াপ্যাড ৩২০ খুবই ভালো একটি ল্যাপটপ। শুধু হার্ডডিস্ক আপগ্রেড করে এসএসডি লাগিয়ে নিলেই দুই থেকে চার বছর অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে। তবে যারা হালকা, স্টাইলিশ ও দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফের ল্যাপটপ খুঁজছেন তাদের জন্য এটি নয়।
মূল্য : ৫৬,৫০০ টাকা